হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া নিউজ ডটকম
প্রকাশিত: ৩০/০৬/২০২৫ ৭:৫০ পিএম , আপডেট: ৩০/০৬/২০২৫ ৮:৫৫ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা এবং প্রতারণার অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ সশস্ত্র চক্রের সদস্য মো. জায়েদ হোসেন ফারুককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে র‌্যাবের চারটি ভুয়া ইউনিফর্ম, একটি জাল র‌্যাব আইডি কার্ড, বিদেশি পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র, গুলি, হাতকড়া ও ছুরি। র‌্যাব জানায়, গত ১১ জুন রাতে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৫ থেকে মো. হাফিজ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে অস্ত্রধারী তিন অপহরণকারী—বরখাস্ত সৈনিক মো. সুমন, সন্ত্রাসী ফারুক ও সিকদার—র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করে রঙ্গিখালীর গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। এ চক্রকে সরাসরি সহায়তা করছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও এনায়েত উল্লাহ। অপহরণের পর হাফিজ উল্লাহর পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা জানিয়ে দেয়, প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া হলে ভিকটিমকে হত্যা করা হবে।
ঘটনার পরপরই র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকস দল মাঠে নামে। ১৩ জুন কুখ্যাত ডাকাত শাহআলমের বাড়ি থেকে সন্দেহভাজন আফ্রিদি ও আব্দুল গফুরকে আটক করে র‌্যাব। পরদিন ১৪ জুন মরিচ্যা বাজার থেকে অপহরণের মূলহোতা বরখাস্ত সৈনিক মো. সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৫ জুন ভোরে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও বন বিভাগের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালানো হয়। ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে হাফিজ উল্লাহকে রঙ্গিখালীর পাহাড় থেকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। একইসঙ্গে উদ্ধার হয় র‌্যাবের জাল ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট, দেশীয় অস্ত্র ও তাজা গুলি।
র‌্যাব জানায়, অপহরণচক্র দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাব পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানোর অভিনয় করে মানুষ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছিল। সুমনের মতো একজন সাবেক সৈনিক পুরো চক্রটিকে ছদ্মবেশে পরিচালনা করত। পরবর্তী গোয়েন্দা অভিযানে ২৭ জুন চক্রের অন্যতম সদস্য কুখ্যাত ডাকাত সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৮ জুন উখিয়ার পশ্চিম মরিচ্যা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মো. জায়েদ হোসেন ফারুককে (২২)। ফারুকের বাড়ি উখিয়া হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা এলাকায়। তার পিতা আ. শুক্কুর এবং মাতা ছমুদা খাতুন। ফারুককে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়—র‌্যাবের ৪টি ভুয়া ইউনিফর্ম ১টি জাল র‌্যাব আইডি কার্ড ১টি হাতকড়া ১টি বিদেশি পিস্তল ২টি দেশীয় অস্ত্র১০রাউন্ড তাজা গুলি ১১টি খালি খোসা ১টি ছুরি জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক জানায়, বরখাস্ত সৈনিক সুমন রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী মার্কেট থেকে মাত্র ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় র‌্যাবের পোশাক তৈরি করিয়ে তা অপহরণকাজে ব্যবহার করতেন। তারা প্রায়শই নিরীহ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। র‌্যাব জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পোশাক ব্যবহারে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দেশের সব টেইলার্স ও পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে কোনোভাবে সরকারি বাহিনীর পোশাক বিক্রি বা সেলাই না হয়। এদিকে অপহরণে প্রত্যক্ষ জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন এবং কুখ্যাত ডাকাত শাহআলম এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আলোকিত উখিয়া পত্রিকার সম্পাদক ও সংবাদ বিশ্লেষক মিজানুর রশিদ মিজান বলেন, এই অপহরণচক্রের সক্রিয়তা শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি নয়, বরং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ভুয়া ইউনিফর্ম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার এই ধরনের ঘটনা যেন আরও বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস না হয়ে ওঠে এ জন্য জরুরি এখনই শক্ত পদক্ষেপ।

পাঠকের মতামত

ভূয়া ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা, পালংখালী তাজমান হাসপাতালসহ চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

উখিয়ায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে চার মামলায় ২লাখ ৫৫হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে উপজেলা প্রশাসন। ...

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বদলে বিষাক্ত ট্যাবলেট, প্রাণ গেল উখিয়ার মরিয়মের

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গ্রামে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বদলে ভুলক্রমে ইঁদুর মারা ট্যাবলেট সেবন করে মরিয়ম ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের চালু হলো শিক্ষা কার্যক্রম!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আবার চালু হয়েছে মিয়ানমার কারিকুলামের মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষাকেন্দ্রগুলো। শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ার ...